শিক্ষামন্ত্রণালয়ে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা – উপেক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সুপারিশ

প্রকাশিত: ১:২৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০২৩

রিপোর্টিং,নিজস্ব প্রতিবেদক: বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা হিসেবে বিভিন্ন কলেজ, শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা অধিদপ্তরসহ নির্দিষ্ট বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে শিক্ষকদের অর্থাৎ প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকদের পদায়ন করা হয়ে থাকে। স্বাভাবিক কারণে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো ঢাকায় পদায়ন পেতে অনেকে চেষ্টা বা তদবির করে থাকেন। সব সরকারের আমলেই ঢাকায় সংযুক্ত বদলীর মাধ্যমে কিছু শিক্ষক এই সুবিধা নিয়ে থাকেন। অধিকাংশ সময় মানবিক ও যৌক্তিক কারণেই এগুলো দেওয়া হয়। এই বদলির ক্ষেত্রে সর্বদাই বিভিন্ন এমপি-মন্ত্রী এবং আমলাদের তদবির থাকে।

অনেকে বছর শিক্ষামন্ত্রীকে ডিও প্রদান করে সাক্ষাতের মাধ্যমে বদলির বিষয় অনুরোধ করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে আমলাদের আত্মীয়-স্বজন বদলিয়ে ক্ষেত্রে যে অগ্রধিকার পান রাজনৈতিক অনুরোধসমূহ তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয় না। ২০১৯ সালে শিক্ষামন্ত্রী ডাক্তার দীপুমনি দায়িত্ব গ্রহণের পর কয়েকটি বদলী আদেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে কিছু সংখ্যক ব্যক্তিকে পদায়ন করেন যাদের বিরুদ্ধে অতীতে সুপ্রতিষ্ঠিত অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল এবং বর্তমানে তারা বহাল তবিয়্যতে থেকে দূর্নীতি-অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন “গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদ সমূহে তিন বছরের অধিক কোন ব্যাক্তি দ্বায়িত্ব পালন করতে পারবে না”। যেটা আদৌ বাস্তবায়ন করা হয়নি এবং আগামী দিনে এর বাস্তবায়ন হওয়ার মত কোনো আলামত ও দেখা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি শিক্ষা সচিব জনাব সোলায়মান খান যোগদানের পর বদলী ফাইল কার্যক্রম গতি পেলেও অভিযোগ রয়েছে তার সম ব্যাচের দুজন কর্মকর্তার পরামর্শে গুরুত্ব দিয়ে বর্তমানে অনেক গতিহীন হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ ফাইলে অপ্রয়োজনীয় কোয়ারি দেওয়া হয়।

শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বদলির ফাইলে সচিবের একজন নিকটাত্মীয়ের নাম শিক্ষাউপমন্ত্রী জেনে শুনে কেটে দিয়েছেন এবং পূর্বে উপমন্ত্রী অথবা তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার একান্ত কয়েকজনের নাম সচিব কেটে দিয়েছিলেন। যার ফলে অনেক নথি সচিব এবং উপমন্ত্রী দপ্তরে বিনা কারণে বেশ কিছুদিন পর্যন্ত আটকে রাখা হচ্ছে যা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষামন্ত্রীর সুনাম ক্ষুন্ন করছে।

উল্লেখ্য, শিক্ষক বদলির একটি শাখার উপ-সচিব তার দপ্তরে সময় না দিয়ে বেশিরভাগ সময় অন্যান্য মন্ত্রণালয় গিয়ে আড্ডা দিয়ে থাকেন। যার ফলে পাঁচ শতাধিক ফাইল তার দপ্তরে পেন্ডিং রয়েছে। মাসখানেক আগে তার এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন প্রভাষক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েছিলেন।
সুত্র আরও জানায়, আগামী ৯ই এপ্রিল বদলিজনিত মতামত নেওয়ার জন্য শিক্ষা সচিব অধ্যক্ষদের নিয়ে সভা ডেকেছেন। এভাবেই সময়ক্ষেপণ করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষনা পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন আমলারা।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণ : আমাদের দেশে স্থানীয়ভাবে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে এমপিওভুক্তকরণ হলে ওই প্রতিষ্ঠানের পূর্ণতা পায় বলে ধরে নেওয়া হয়। অনেক সমালোচনার মধ্যে এই প্রবণতার সুফল অনেক এবং সুদুরপ্রসারী। স্থানীয় প্রয়োজনের আলোকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষক নিয়োগ সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়ায় নতুন করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে কেউ উদ্যোগ নিচ্ছে না। যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন এমপিওভুক্তি না হলে তা ক্রমেই দুর্বল হয়ে যায় অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা এবং রেজাল্ট খারাপ হতে দেখা যায়। এতে করে ঐ সকল প্রতিষ্ঠান এমপিও নীতিমালা পূরণ করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এরকম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা আর্থসামাজিক সংকটে পড়ে যায়।

সম্প্রতি ৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে এমপিওর জন্য সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছে। যেগুলোর মানদণ্ড একেবারেই নেই। ৮৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে সুপারিশের তালিকায় স্থান নিয়েছে।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ :

কথিত আছে ইতিপূর্বে একজন অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতি পেয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা হবেন তাই তার প্ররোচনায় বা স্বপ্ন বাস্তবায়নে এই বিভাগের জন্ম। এই বিভাগটি যে স্বপ্ন নিয়ে জন্ম হয়েছিল তার বাস্তবায়ন সফলতার চেয়ে ব্যর্থতায় অনেক বেশি বলে অনেকেই মনে করেন। এর কারণ হিসেবে যোগ্য লোকের অভাব এবং কেউ কেউ মনে করেন মন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে ঘাটতি।

এই বিভাগটি এখনো কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কেবলই মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন সিদ্ধান্তগুলো মোটিভাইট করে থাকে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে এ পর্যন্ত যারা দ¦ায়িত্ব পালন করেছেন তারা নতুন নতুন নিয়ম করে এই শিক্ষাব্যবস্থাকে জটিল থেকে জটিলতর করেছেন। এ পর্যন্ত কোনো মন্ত্রী-সচিব কারিগরি শিক্ষকদের এমপিও না পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না। শুধু নিয়মকানুনের অযৌক্তিক অজুহাতে হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর পেটের ভাত কেড়ে নিচ্ছেন। নামে কারিগরি হলেও বাস্তবে সাধারণ শিক্ষার চাইতে অনেক পিছিয়ে। নিজেদের দপ্তর কারিগরি তে রুপান্তর করতে যারা অপরাগ তাদের দিয়ে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন সম্ভব নয়।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আক্ষেপ করে বলেন, “কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে এমপিও শাখায় এমন একজন রয়েছেন যিনি কোনো কর্মকর্তা বা সাধারণ শিক্ষক কারোর ফোন রিসিভ করেন না”। শিক্ষকদের উপর বিভিন্ন সময়ে হামলা করেছেন এবং অভিযোগের এক নম্বর আসামি যার অবহেলার কারণে শিক্ষক কর্মচারী বেতন পাচ্ছে না। আবার তাকেই অধিদপ্তরের শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের কয়েকজন বিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের মতে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পতাকাবাহী যোগ্য ও সৎ শিক্ষকদের পদায়ন নিশ্চিত করে এমপিও প্রদানে ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রাধিকার দেয়া এবং কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের পরীক্ষিত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হোক। যাতে দেশের উন্নয়নে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে সহায়ক হতে পারে।