যুবকের সম্পত্তি লোপাটে সক্রিয় একটি চক্র, নেপথ্যে একটি প্রাইভেট হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা, প্রশাসন নিরব পর্ব ১।।

প্রকাশিত: ২:৩৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৩

রিপোর্টিং,আমিনুল ইসলাম বাবু : যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) ৬ হাজার কোটি টাকার বেদখল সম্পত্তি সরকারি হেফাজতে নিয়ে বিক্রি করে গ্রাহকদের মধ্যে বন্টন করার জন্য দেশের উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যুবকের সব সম্পত্তি সরকারি হেফাজতে গ্রহণ ও বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা পরিশোধ সংক্রান্ত সরকারের সব স্তরের নির্দেশনা রহস্যজনক কারণে আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি এই সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ছয় বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। এছাড়া দুই বছর আগে একই বিষয়ে যুবকে প্রশাসক নিয়োগ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বর্তমান অর্থমন্ত্রীর অনুরোধও অদ্যাবধি কার্যকর হয়নি। পাশাপাশি যুবক নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে সাড়ে সাত বছর আগে সরকারের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের কমিটির সুপারিশও ঝুলে আছে।

প্রায় এক যুগেরও আগে সরকারের পৃথক দুটি কমিশন যুবকের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করেছিল। এগুলোও আলোর মুখ দেখেনি।

এই সুযোগে যুবকের সম্পত্তি বেহাত বা লোপাট করার চক্রান্তে সক্রিয় একটি মহল। সাপ্তাহিক রিপোর্টিং এর অনুসন্ধানী টীম ধউর বেরী বাধস্থ যুবক হাউজিং সোসাইটি ডেভ. লিঃ এর প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে গিয়ে অনেক রহস্যময় তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এই তথ্যের শিকড় খুঁজতেই বেড়িয়ে আসে এক চাঞ্চল্যকর জালিয়াতির ঘটনা যা তাক লাগিয়ে দেয়।

আমরা প্রথমেই চিহ্নিত করতে চেষ্টা করি যুবকের সম্পত্তির উপর স্থাপনা গড়া হয়েছে কোথায় কোথায়? এবং আমরা পেয়ে যাই বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাসেই গড়ে তোলা হয়েছে একটি শিল্প কারখানা। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারি এই প্লটটি যুবকের সম্পত্তি। শিল্প কারখানার লোকজনের নিকট থেকে তেমন কোন তথ্য না পেলেও জানতে পারি ইস্ট ওয়েস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও তার ভাই মোস্তাক এই জমির বর্তমান মালিক। আমরা এবার যাই সাবরেজিস্টার অফিসে সেখানে কোন তথ্য সংগ্রহ করতে না পেড়ে আমরা ধউর মৌজার সংশ্লিষ্ট এসি ল্যান্ড অফিসে যোগাযোগ করে অনেক কাঠ খড়ি পুড়িয়ে সংগ্রহ করি ডা: মোয়াজ্জেম হোসেন ও মোস্তাক আহম্মেদের নামজারীর ফাইল, সেখান থেকে সংগ্রহ করি দলিল দাতা লোকমান হোসেনের নামজারীর ফাইল, সেখানে দেয়া যায় লোকমান হোসেন জমির মালিক হয়েছেন ৫জন দলিল দাতার ৫টি দলিল মোতাবেক। আমরা এই দলিল সমুহ এসিল্যান্ড অফিস থেকে সংগ্রহ করি। এবার আমরা আরো একটু গভীরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাই সাবরেজিস্টার অফিসে, সেখানে গিয়ে আমাদের সংগৃহিত ৫টি দলিল নাম্বার দিয়ে সার্চ বা তালাসি দেই অনেক খোঁজা খুঁজির পর আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হই এবং দেখতে পাই তা হলো, ৫টি দলিল নম্বর এর প্রতিটির দলিল গ্রহীতা যুবক হাউজিং এন্ড রিয়েল এস্টেট ডেভ. লিঃ এর পক্ষে চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন। আর এ ৫টি দলিলের দাতা ৫জন ভিন্ন ব্যাক্তি।

যেহেতু, যুবকের সম্পত্তি সরাসরি বেচা-কেনায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তাই, সুকৌশলে ক্রেতা বিক্রেতা জালিয়াতির মাধ্যমে সকল দলিল সৃজন করে “যুবক হাউজিং এন্ড রিয়েল এস্টেট ডেভ. লিঃ এর পক্ষে চেয়ারম্যান” বাদ দিয়ে দলিল গ্রহীতার স্থানে লোকমান হোসেন করেন। দলিল দাতাদের ছবির সাথে সৃজিত দলিলের কোন দাতার ছবির মিল নেই, স্বাক্ষরের কথা বাদই থাক।

সরকারী নিষেধাজ্ঞা সত্যেও যুবকের সম্পত্তি আত্মসাতকারী দুষ্ট চক্রের তৎপরতা অব্যাহত থাকলে যুবকের হতভাগা গ্রাহকদের পূর্ণ নিরাশ হতে হবে। তাই এদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নিতে জোড় দাবী জানান যুবক গ্রাহকদের।

আগামী পর্বে আমরা তুলে ধরবো যুবকের সম্পত্তি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হরনকারী সিন্ডিকেটের পূর্ণ তথ্য। দেখতে চোখ রাখুন সাপ্তাহিক রিপোর্টিং এর আগামী সংখ্যায়।