মিটার রিডার রফিকুল ইসলামের কয়েক’শ কোটি টাকার অবৈধ্য সম্পদ, নীরব ভূমিকায় দূদক” রফিকুলের দাবি দুদককে ম্যানেজ করেছি, আমার কিচ্ছু হবেনা

প্রকাশিত: ৮:০৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৩

রিপোর্টিং,নিজস্ব প্রতিনিধি : ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানীর (ডিপিডিসি) এক মিটার রিডার মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্লট, ফ্ল্যাটসহ নামে বে-নামে কয়েক’শ কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। প্লট এবং ফ্ল্যাটের পাশাপাশি কোটি টাকা দামের কয়েকটি গাড়ীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তার সম্পদের ফিরিস্তি নিয়ে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর চাঁদ উদ্যান এলাকার বাসিন্দা সোয়েব হোসেন দূদকে অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগের পর দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে রফিকুলের কয়েক’শ কোটি টাকার সম্পদের ফিরিস্তি নিয়ে খবর প্রকাশ করা হয়।

খবর প্রকাশের পর রফিকুল ইসলাম কয়েকটি ফোন নাম্বার থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের নানা রকম হুমকি প্রদান করে। সেই সময় অশ্রব্য ভাষায় গালাগালিসহ দূদককে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন রফিকুল ইসলাম। এ সময় তিনি আরও জানান, আমার বিরুদ্ধে কতো নিউজ হলো। এরপরও কেউ কোন কিছু করতে পারছে আমাকে? দূদক আমাকে কখনো চিঠি দিয়ে ডেকেছে? আমার কোন কিছুই হবে না। কারণ, দূদকে কি লাগে আমি জানি। তাদের চাহিদার চেয়েও বেশি টাকা দিয়ে দিয়েছি। আপনারা হাজার বার নিউজ করলে আমার এক পরিমান চুলও নাড়াতে পারবেন না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিডিসি লালমাটিয়া ব্রাঞ্চের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, তার এমন সীমাহীন দূর্নিতীর পিছনে ডিপিডিসি’র লালমাটিয়া ব্রাঞ্চের ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মনিরুজ্জামান জড়িত রয়েছে। তিনি তার দূর্নীতির জাল রফিকের মাধ্যমে পুরো এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন। বিদ্যুতের ঘাটতি থামাত সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। অথচ, রফিক ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে এই এলাকার বস্তি এবং রিক্সার গ্যারেজ জুড়ে অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এমন দূর্নীতির চিত্রের হদিস লালমাটিয়া ডিপিডিসি অফিসে গিয়েও মিলে।

সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রফিক প্রতিদিন সকালে অফিসে এসেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যায় অবৈধ সংযোগের গ্রাহকের খোঁজে। সারাদিন তাকে অফিসের কোন কাজে না করে কোথায় অবৈধ সংযোগ দিতে হবে। কোথায় কার নতুন সংযোগ লাগবে এসব খোঁজে বেড়ানোর অভিযোগ করেন তার সহকর্মীরা। এমন প্রমান মেলে লালমাটিয়া ব্রাঞ্চের ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মনিরুজ্জামান ফোন দেওয়ার পর। এসময় তার বক্তব্য নিতে অফিসে গেলে তিনি সরাসরি রফিককে ফোন দিয়ে অফিসে আসতে বলেন। অপরপ্রান্ত থেকে রফিক কড়া ভাষায় জানায়, তিনি সংযোগের কাজে ব্যস্ত আছেন। এখন আসতে পারবেন না। তার এমন আচরনে তারই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ফোন কেটে দিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে রির্পোটিংকে বলেন আসলে রফিকের বিষয়ে বিদ্যুৎ অফিসের কিছু করার নাই যা করার দুদককে করতে হবে । তিনি রির্পোটিংকে পরামর্শ দেন দুদকে অভিযোগ করতে।

রফিকুল ইসলাম যে এলাকায় ডিউটিতে আছেন সেই এলাকায় গিয়ে কথা বলতে চাইলে ইন্জিনিয়ার মোঃ মনিরুজ্জামান ঠিকানা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন আপনার অফিসের সহকর্মি বিপদে পড়লে আপনি কি তাকে ধরিয়ে দিতেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ডিপিডিসির মিটার রিডারের নাম একেএম রফিকুল ইসলাম। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদ ও লালমাটিয়া ডিপিডিসি অফিসে মিটার রিডার হিসেবে চাকুরী করছেন। এই এলাকায় চাকরীর সুবাদে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যান,চন্দ্রিমা হাউজিং,নবীনগর হাউজিং,ঢাকা উদ্যানসহ মোহাম্মদপুর এলাকার বিভিন্ন বস্তি, অবৈধ বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, মোটর চালিত অটোরিকশার গ্যারেজে অবৈধ সংযোগসহ বিল কম আসতে মিটার টেম্পারিংয়ের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে এসব অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেন। এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের চাঁদ উদ্যানে ব্লক-এ এলাকার ১ নম্বর রোডে ৭ নম্বার চারতলা বাড়ি,ব্লক এ ৬ নম্বার বাড়ী ৩ তলা,এ ব্লকে ৪ নম্বার বাড়ীটি দুইতলা বাড়িসহ ১০ কাটার একটি প্লট কিনেছেন। পাশাপাশি, মোহাম্মদপুরের লতিফ রিয়েল এস্টেট এলাকার ১ নম্বর রোড ১টি ফ্ল্যাট, কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকায় ১০ লাখ টাকা দিয়ে বোনকে একটি ফ্ল্যাট বন্ধক রেখে দেওয়াসহ লালমাটিয়ায় ২০ কোটি টাকার একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন।

এ ছাড়াও, হাইস ব্র্যান্ডের ৪টি গাড়ী। যা ডিপিডিসির হেড অফিসে কর্মকর্তাদের আনা নেওয়ার কাজে টেন্ডারের মাধ্যমে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। এসব সম্পত্তি ছাড়াও নামে বে-নামে আরও অনেক সম্পদ গড়ে তুলেছেন। তার গ্রামের বাড়ি পাবনা জেলার সাথিয়া উপজেলায় কয়েক একর আবাদী জমি কিনেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিপিডিসির লালমাটিয়া শাখার কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, সে লালমাটিয়া ব্রাঞ্চের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের খুব কাছের লোক হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় মিটার টেম্পারিং,অবৈধ সংযোগ দিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। চাঁদ উদ্যান এলাকার ১ নম্বর রোডের বাড়িগুলোতে সে বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করে আসছে। তার এক মাত্র নেশাই হলো, প্রতিবছর কখনো ফ্ল্যাট কেনা। আবার কখনো প্লট কেনা। চাঁদ উদ্যান এলাকায় সে ১০ কাটার আরেকটি প্লট বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা থেকে ১৫ কোটি দাম ধরে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে বায়না করেছে। এছাড়াও, বসিলা একটি হাউজিংয়ের তার ঘনিষ্ঠ এক ডেভেলপার ব্যবসায়ীর মাধ্যমে প্লট ব্যবসায় বিনিয়োগ করে আসছে। ইতিমধ্যে এখন সরাসরি প্লট না কিনে প্লট ব্যবসায় বিনিয়োগ করছে। তার এসব বিষয় ডিপিডিসির হেড অফিস জানার পরও কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় আমরা হতাশায় রয়েছি। একবার আমাদের একজন মুখ খুলেছিলো। তখন তাকে চাকরী থেকে কয়েকদিনের জন্য বরখাস্ত করে চাকরী খেয়ে ফেলার হুমকি দিয়েছিলো। এজন্য তার ভয়ে কেউ এখন আর মুখ খুলতে চায় না।

ডিপিডিসির কর্মকর্তা ছাড়াও, তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, সে ফ্ল্যাট-প্লট,গাড়ি-বাড়ী ছাড়াও ঋণ দেওয়ার নামে বর্তমানে কয়েকটি এমএলএম ব্যবসা খুলে বসেছেন। যা প্রতিনিয়ত আলাদিনের চেরাগের মতো আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে উঠছেন। তার এমন সীমাহীন দূর্ণীতির বিষয়ে কয়েকদফায় বর্তমানে কর্মরত লালমাটিয়া ডিপিডিসি অফিসে গিয়ে তার খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিলে সে তার কল দেওয়া ফোনটি রিসিভ না করে তার ব্যবহৃত অন্য নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে প্রতিবেদককে র‍্যাব, গোয়েন্দা সংস্থা ( বিশেষ একটি গোয়েন্দা সংস্থা ) দিয়ে তুলে নেওয়া এবং তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। যা প্রতিবেদকের কাছে ফোন কলের রেকর্ডটি সংরক্ষিত আছে। চলবে….