টোকেন দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ হেমায়েতপুর অটোস্ট্যান্ডে অতিষ্ট চালকেরা

প্রকাশিত: ২:১৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৩

রিপোর্টিং প্রতিবেদন: ঢাকার অদূরেই সাভার উপজেলার তেতুলঝরা ইউনিয়নে হেমায়েতপুর অটোস্ট্যান্ডের টোকেন দিয়ে অটোরিকশা থেকে স্বপ্না ওরফে সুমন ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সেখানে চলাচল করা অটো রিক্সাগুলো থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। এছাড়া ওইসব অটো রিক্সা থেকে মাসিক হারেও চাঁদা তোলে ওই সংঘবদ্ধ চক্র। ইতিমধ্যে অটোরিক্সায় চাঁদা আদায়ের অভিযোগে সাভার থানায় মামলাও হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব অটোরিকশাগুলো মুলত হেমায়েতপুর অটোস্ট্যান্ড থেকে ট্যানারী, মানিকগঞ্জের সিংগাইর, শামপুর ও আলীপুর পর্যন্ত চলাচল করে। এই লাইনে চালাতে অটোরিকশা চালকদের মাসে ৩০০ টাকা চাঁদা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। এছাড়াও প্রতিদিন ৫০ টাকা করে দিতে হয় লাইন নিয়ন্ত্রকদের। প্রতি মাসে অটো রিক্সার জন্য আলাদা আলাদা টোকেনও রয়েছে।

এছাড়া, অন্য এলাকা থেকে কোন অটো রিক্সা প্রবেশ করলেই তাদের নিকট কৌশলে পাঁচশ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করে। হিসেব কসলে দেখা যায় ওইস্ট্যাডে চলাচল করা দেড় হাজার অটোরিকশা থেকে মাসে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা আদায় করে সুমন গংরা। ফলে অটোরিকশার লাইন নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ‘সন্ত্রাসীদের’ শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি চলে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া। এরফলে তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাধারণ অটো রিক্সা চালকরা। ইতিমধ্যে ওই টোকেনের কয়েকটি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

অটো রিক্সা চালক হান্নান(ছদ্মনাম) জানান, হেমায়েতপুর অটোস্ট্যান্ড থেকে ট্যানারী ও সিংগাইর পর্যন্ত অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা চালাই। তিনি প্রায় তিন বছর ধরে এ এলাকায় লেগুনা চালিয়ে আসছেন। এই স্ট্যাÐের এলাকায় তাকে প্রতিদিন ৫০-৮০ টাকা চাঁদা দিতে হয়।

আসমত আলী (ছদ্মনাম) নামে একজন বলেন, এই স্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে স্বপ্না ওরফে সুমন। এই সুমনের হেমায়েতপুরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা লোকজন দিয়ে মাসোয়ারার ভিত্তিতে এই কাজ করায়। অত্যান্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া এই সুমন চাঁদাবাজি করেই কোটি কোটি টাকার মালিক। শোনা যায়, সুমন দুই এক মাস পর পরই প্রোমোদ ভ্রমণের জন্য দেশের বাহিরে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অটো রিক্সা চালক জানান, তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অনেক কষ্টে অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিন অটোরিকশা চালিয়ে যে আয় হয় তাতে করে তাদের সংসার চালাতে অনেক সময় হিমশিম খেতে হয়। অথচ স্থানীয় নেতার লোকজন প্রতিদিন তাদের কাছ থেকে ৫০ টাকা ও প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে বলে অভিযোগ করেন তারা।

তারা আরো বলেন, প্রতি মাসে অটোরিকশায় একটি টোকেন নম্বর দেওয়া হয়। ওই টোকেন না থাকলে কেউ এই এলাকায় সড়কে অটো চালাতে পারে না। এ ছাড়াও টাকা না দিলে তাদের অটোরিকশা আটকে রাখা হয় বলেও অভিযোগ করেন। তাছাড়া তাদের নিয়মিত চাঁদা না দিলে অটোরিকশা চালানোই বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে তো এলাকায় থাকতে দিবেনা।

ইতিমধ্যে ওই লাইনে চাঁদা নেওয়াকে কেন্দ্র করে গত বছরের ডিসেম্বরে সাভার থানায় একটি মামলাও হয়েছে। মামলার আসামীরা জামিনে বেরিয়ে এসে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আসামীরা হলেন, মো. বাহাদুর (৪৫), মো. রফিকুল ইসলাম(৩৫), আব্দুর রহিম(২৮), রিপন(৪৫), মো. আজাদ(২৭), নজরুল ইসলাম(৩৮)।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, হেমায়েত পুর এলাকায় অটো চালাতে গেলে মাসিক দুই হাজার টাকা ও দৈনিক ৫০ টাকা হারে চাঁদা দিতে হয়। চাদা দিতে না চাওয়ায় গাড়ী ভাঙ্গচুর, হুমকী-ধামকী ও মারপিট করে। বাদি নিকট জোর করে চাঁদা নেওয়ার পর র‌্যাবের টহল টিমকে বিষয়টি জানালে ওই র‌্যাবের টিম চাঁদার টাকাসহ ধরে ফেলে। পরে তাদের ৩৮৫ ও ৩৮৬ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মামলা হয়। মামলা নং ৬৩।

সাভার মডেল থানার ওসি(তদন্ত) আব্দুর রশিদ জানান, পুলিশ কোনভাবেই কোন চাঁদাবাজি বরদাশত করবেনা। আমাদের টহল দল নিয়মিত টহল দেয়। এমন কোন ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।