মাদারীপুরে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু, হাসপাতাল ভাঙচুর

প্রকাশিত: ২:২০ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৩

রিপোর্টিং,মীর ইমরান মাদারীপুর নিজস্ব প্রতিবেদকঃ মাদারীপুরে চিকিৎসকের অবহেলায় এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভাঙচুর করেছে রোগীর স্বজন ও স্থানীয়রা। শুক্রবার(৩-মাচ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাদারীপুর শহরের পানিছত্র এলাকায় কে.আই হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এর আগেও গত ২৩ ডিসেম্বর একই অভিযোগে কে.আই হাসপাতালে ব্যাপক ভাঙচুর করেছিলো রোগীর স্বজনরা। ডাক্তারের অবহেলায় মৃত্যু ঐ রোগীর নাম শারমীন বেগম (৩০)। তিন সন্তানের জননী। সদর উপজেলার ছিলারচর এলাকার আনোয়ার খালাসীর স্ত্রী ও কালিকাপুর এলাকার নূর মোহাম্মদ খানের মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শহরের পপুলার হাসপাতালে অস্ত্রোপচার মাধ্যমে শারমীন বেগমে এক পুত্র সন্তান হয়। নিয়ম অনুযায়ী তাকে ৭ দিন পরে সুস্থ্য অবস্থায় তার বাবার বাড়িতে নিয়ে যান শারমীনের স্বামী। গত দুদিন ধরে শারমীনের মেরুদণ্ডে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হওয়ায় তাকে শুক্রবার সকাল ৯টায় কে.আই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে কনসালটেন্ট এন্ড সার্জন ও গাইনী বিভাগের চিকিৎসক সাইয়েদা সিদ্দিকা ওরফে এলিজা নামের এক চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে শারীমের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

দুপুর ১টার দিকে ওই রোগীর মেরুদণ্ডের ব্যথা কমানোর জন্য তার শরীরে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করেন চিকিৎসক। রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের শয্যায় শারমীনের মৃত্যু হয়। বিষয়টি গোপন রেখে রাত সাড়ে ৯টার দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হলে বিষয়টি ধরা পড়ে স্বজনদের চোখে। এসময় শারমীনের স্বজনেরা ক্ষুদ্ধ হয়ে এই ঘটনার প্রতিবাদ জানায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই রোগীর স্বজনদের সঙ্গে একপর্যায় বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটায়। পরে স্থানীয় লোকজন ক্ষুদ্ধ হয়ে হাসপাতালের গ্লাস ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ও অভ্যর্থনা কক্ষে ভাঙচুর চালায়। এরপরই ঘটনার বিচার দাবিতে কে.আই হাসপাতালের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় ও স্বজনরা।

এ বিষয়ে সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শারমীনের স্বামী আনোয়ার খালাসী জানান, পপুলার হাসপাতালে আমার স্ত্রী সিজার করে সাইয়েদা সিদ্দিকা এলিজা। তার ভুল চিকিৎসার কারণে আমার স্ত্রী গত ৭ দিন ধরেই ব্যথায় ভুগছিল। ঐ চিকিৎসকের সঙ্গে ব্যথার বিষয়টি নিয়ে পরামর্শ করলে তিনি আমার স্ত্রীকে কে.আই হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলেন। তার কথামত আমি হাসপাতালে ভর্তি করি। পরে হঠাৎ শুনি আমার স্ত্রী আর জীবিত নাই। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, পিঠের ব্যথায় আমার স্ত্রী মারে নাই। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার কারণে আমার স্ত্রীকে মরতে হইছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই ঐ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই। একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে কে.আই হাসপাতালে সামনে আহাজারি করছিল তার মা লিলি বেগম।

তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র মাইয়াডারে ওরা ভুল চিকিৎসা করাইয়া। আমার কলিজার টুকরা মাইয়াডারে ঘুমের সুই দিয়া মাইরা ফালাইছে। এই ডাক্তাররা পারবো না তারা না কইতো, আমি সকালেই মাইয়াডারে ঢাকা লইয়া যাইতাম। ঢাকায় নিলে আমার মাইয়াডা মরতো না।’ শারমীনের চাচা মাসুদ খান বলেন, ‘কে.আই হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরেই অনেকগুলো টেস্ট করাতে বলে। আমরা সবগুলো টেস্ট সেখানে করাই বিকেলে ডাক্তার আমাগো বলে, ‘‘রোগীর হার্ডে সমস্যা আছে, ব্যথা কমতে সময় লাগবে।’’ তখন যদি ডাক্তার কইতো রোগীর অবস্থা ভালো না তাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যান, তাহলে আমার ভাতিজার এভাবে মরতো হতো না।’

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে কে.আই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির হোসেন বলেন, ‘আমি ঐ রোগীর বিষয় কিছুই জানি না। হাসপাতাল কেন তারা ভাঙচুর চালালও তাও জানি না। তবে চিকিৎকের কোন ভুল নেই। তিনি তার সঠিক চিকিৎসাই দিয়েছেন।’ খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন মাদারীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ার হোসেন চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘আমরা রোগীর স্বজনদের বুঝিয়ে বলেছি, তারা লাশটি আমাদের কাছে দিয়েছেন। ঐ নারীর মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। স্বজনরা থানায় অভিযোগ দিলে , অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঐ চিকিৎসক ও হাসপাতালটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।