জামায়াত শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মরিয়া শাহেদুল খবির, নিয়ম ভেঙে নিজ দ্বায়িত্বে যোগদান করালেন সাবেক শিবির ক্যাডারকে!

প্রকাশিত: ৫:১৭ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩

রির্পোটিং,নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ০৯ই ফেব্রুয়ারী প্রফেসর মো: আব্দুল খালেক সরকারকে রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক করে আদেশ জারি করে শিক্ষামন্ত্রণালয়। এর আগে ১লা ফেব্রুয়ারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা উত্তম কুমার, রফিকুল ইসলাম ও ডাবলু সরকার যশোর শিক্ষা বোর্ডের সচিব প্রফেসর মো আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির ক্যাডার থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের উপর অত্যাচার- নির্যাতন করার তথ্য প্রমানসহ শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।

কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারে লুকিয়ে থাকা সাবেক শিবিরের একটি চক্রের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় সাবেক শিবির ক্যাডার প্রফেসর মো: আব্দুল খালেক সরকারকে রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক করে আদেশ জারি করে শিক্ষামন্ত্রণালয়। এতে তিব্র নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করেছে ছাত্রলীগের সাবেক ঐ তিন নেতা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সুত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রশাসনের রাঘববোয়াল ক্ষ্যাত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীসহ শিক্ষা ক্যাডারে লুকিয়ে থাকা জামায়াতপন্থি কর্মকর্তাদের সহযোগীতায় ঐ শিবির ক্যাডারের পদায়ন বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীর বিরুদ্ধে একাধিক দূর্নীতি, নিয়োগ বানিজ্যসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

সদ্য বাতিল হওয়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে নিয়োগ পরীক্ষা কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো.শাহেদুল খবির চৌধুরীর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আগে থেকেই আছে। অত্যন্ত প্রভাবশালী মাউশির এ পরিচালকের (কলেজ ও প্রশাসন) বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে নেমে একপর্যায়ে পিছু হটে খোদ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)।

জানা গেছে,শাহেদুল খবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার সময়ে শিবিরের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যার ফলে শিবির ঘরণার কর্মকর্তা কর্মচারীদের তিনি বিভিন্ন জায়গায় গ্রাইজ পোষ্টিং দিয়ে থাকেন। সাবেক শিবির ক্যাডার প্রফেসর মো: আব্দুল খালেক সরকারকে গত ১৬ই ফেব্রুয়ারী অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত আঞ্চলিক পরিচালকের অনুপস্থিতিতে এবং সম্মতি ছাড়াই জোড়পূর্বক সেখানকার আরেক সাবেক শিবির ক্যাডার সহকারি পরিচালক আব্দুর রহিমের মাধ্যমে যোগদান কার্যক্রম সম্পন্ন করেন। এনিয়ে শিক্ষা প্রশাসনে সমালোচনার ঝড় বইছে। শাহেদুল খবির বিসিএস শিক্ষা সমিতির সভাপতির পদে থেকে জামায়াতপন্থীদের প্রাইজপোষ্টিংয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কিছু বিতর্কিত শিক্ষক ও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি শিবির নেটওয়ার্ক তৈরীর চেষ্টা করছেন না তো? এমনটাই ধারনা করছেন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের কয়েকজন শিক্ষক নেতা।

রফিকুল ইসলাম বলেন, শিবিরের অধ্যষিত এলাকা রাজশাহীতে বহু অত্যাচার- সহ্য করে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। আব্দুল খালেক সরকার আমাদের ম্যাচে হামলা করতো। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পর্যন্ত ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল। আজ তাকে আবার রাজশাহীতে পদায়ন করা হলো। আমরা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু মন্ত্রীকে পাই নি। পরবর্তীতে আমরা লিখিত অভিযোগ দিয়ে আসি। এবিষয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিব।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, প্রফেসর মো: আব্দুল খালেক সরকার আওয়ামী পরিবারের সন্তান হলেও ছাত্র জীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির ক্যাডার ছিলেন। এমনকি বর্তমান সময়েও সংগঠনে অতি গোপনে মাসিক ইয়ানত (চাাঁদা) প্রদান করে আসছেন। ইতিমধ্যে যশোর পৌর আওয়ামীলীগের এক সদস্য তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, প্রফেসর মো: আব্দুল খালেক সরকার বিএনপি ও জামায়াতপন্থী কর্মকর্তাদের যোগসাজসে একটি সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন এবং তার অধিনস্থ জামায়াত পন্থী কর্মকর্তা কর্মচারীদের পদোন্নতি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে সাহায্য ও তদবির করেন।

৮০’র দশকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পড়াশোনার সময়ে বিশ্ববিদ্যারয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা শিবির ঘাটি বলে খ্যাত বিনোদপুরের শিবিরের ম্যাচে অবস্থান করে রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতেন। তার নিজ এলাকা নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি ত্যাগী আওয়ামী পরিবারের সন্তান। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সময় বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাত্র ৫/৬ মাস চাকুরির মেয়াদ থাকাকালীন সময়ে জামায়াত-শিবির অধ্যষিত রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক হয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে একটি গোষ্টিকে চাঙ্গা করার জন্য তিনি মন্ত্রণালয়ে তদবির করে রাজশাহীতে পদায়ন হয়েছেন।

এ বিষয়ে লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক সুভাষ সিংহ রায় বলেন, শিবিরের অত্যাচার থেকে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতা থেকে কর্মী পর্যন্ত কেউ বাদ যায় নি। শিক্ষার মত একটি গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে কোন শিবির ব্যাকগ্রাউন্ডের কর্মকর্তা থাকলে সেখানে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।