কুসিক নির্বাচনে নৌকার রিফাত ৩৪৩ ভোটে জিতলেন

প্রকাশিত: ১০:২৬ অপরাহ্ণ, জুন ১৫, ২০২২

রির্পোটিং প্রতিবেদন : হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে জয় পেয়েছেন আরফানুল হক রিফাত। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি নির্বাচন করেছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। নির্বাচনে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গত দুই বারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু।

রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী ঘোষিত বেসরকারি ফলাফল অনুযায়ী, মোট ১০৫টি কেন্দ্রে আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনিরুল হক সাক্কু ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট পেয়েছেন। দুই প্রার্থীর মাঝে পার্থক্য ৩৪৩ ভোট। আজ বুধবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এই বেসরকারি ফল ঘোষণা করা হয়।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের এটি তৃতীয় নির্বাচন। আজ বুধবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়। কুসিক নির্বাচনে এবারই প্রথম ইভিএমে ভোট হলো। ভোট শুরুর এক ঘণ্টার মাথায় বৃষ্টি শুরু হয়। এতে সমস্যায় পড়েন ভোটাররা। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ভোট কেন্দ্রে আসতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ভোটারের উপস্থিতি।

এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণে ইভিএমে ধীরগতি দেখা গেছে। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ভোট দিয়েছেন। কেউ কেউ ভোট না দিয়েই ফিরে গেছেন। এই ধীরগতির কারণে ভোট শেষ হওয়ার পূর্বঘোষিত সময়সীমা বিকেল ৪টার পরও ভোটগ্রহণ করা হয়। এছাড়া কোনো কোনো ভোটার তাদের আঙুলের ছাপ ইভিএমে মেলেনি বলে অভিযোগ করেছেন।

ভোট শেষ হওয়ার পূর্বনির্ধারিত সময় বিকেল ৪টায়ও যারা ভোট দিতে কেন্দ্রে অপেক্ষমাণ ছিলেন, বিকেল চারটার পর শুধু তাদের ভোটই নেওয়া হয়েছে। নতুন করে কাউকে ভোট দিতে কেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা আগেই জানিয়েছিল প্রশাসন। নির্বাচনে ১০৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৭৫টি তল্লাশিচৌকি, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, র‍্যাবের ৩০টি টিম, ৫২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন। পুলিশের ৩ হাজার ৬০৮ জন সদস্য নির্বাচনের মাঠে দায়িত্ব পালন করেন।

নির্বাচনে ইভিএমে কোনো ধরনের যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের জন্য ছিলেন ৩৫ জন। ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের সারিতে একটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা দেওয়া হয়। প্রতি বুথে (কক্ষে) একটি করে মোট ৬৪০টি সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। ভোটকক্ষের ভেতরে কোনো এজেন্ট কোনো ভোটারকে তার পছন্দের প্রতীকে ভোটদানে প্রভাবিত করলে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল।

ভোটগ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করে বলেন, এ নির্বাচনে প্রশাসন থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা তিনি পাননি। বেশকিছু ভোটকেন্দ্রে তার লোকজনকে হয়রানি করা হয়েছে এবং কোথাও মারধরও করা হয়েছে। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে জানান নৌকার প্রার্থী।

সাক্কু গণমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ খুবই সুন্দর হয়েছে। ইভিএমের কারণে ভোট কাস্টিং কম হয়েছে। অনেকে ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। আমি তো মনে করেছিলাম, ইভিএম শুধু জাতীয় নির্বাচনের জন্য। কিন্তু সিটি নির্বাচনের মাত্র একশ কেন্দ্রেই যে জটিলতা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনে তো হাজার হাজার কেন্দ্র থাকবে। এটা ইভিএমে যদি হয়, তাহলে কী হবে তা এখনই বুঝা যাচ্ছে।

নির্বাচনের পরিবেশের জন্য জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে আরেক মেয়র প্রার্থী নিজামউদ্দিন কায়সার বলেন, খুবই ভালো নির্বাচন হয়েছে। এখন যদি ইভিএমে কারচুপি না হয় তাহলে আমার পক্ষেই রায় আসবে। ঘোড়া প্রতীকে যে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে- ইভিএমে কোনো কারিগরি না করা হলে তা ফলাফলে প্রতিফলন ঘটবে।

এদিকে ভোটগ্রহণ শেষে ব্রিফিংয়ে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘সার্বিক দিক বিবেচনায় বলা যায়, কুমিল্লা সিটিতে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ভোটারদের কাছ থেকেও তেমন কোনো অভিযোগ আসেনি। এ সিটিতে প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। খুব বিরূপ মন্তব্যও আমরা পাইনি।’