বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে বাংলার বীর ফাউন্ডেশন আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মরোনত্তোর সন্মাননা প্রদান

প্রকাশিত: ১১:১৮ অপরাহ্ণ, মে ১২, ২০২২

রির্পোটিং,বিশেষ প্রতিনিধি : বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে বাংলার বীর ফাউন্ডেশন আয়োজিত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে একটি জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মরোনত্তোর সন্মাননা প্রদান করা হলো রাজবাড়ীর একজন মহিয়ষী নারী,সমাজ সেবিকা মরহুম সালেহা বেগমকে।

 

তাঁর সুযোগ্য সন্তান ড. শেখ মহঃ রেজাউল ইসলাম,অতিরিক্ত সচিব ও ড. জাহিদুল ইসলাম, কনসালটেন্ট,কনকড’ গ্রুপ এবং চেয়ারম্যান স্পাইড এর হাতে এই সন্মাননা তুলে দেয়া হয় বাংলার বীর ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় ড. রেজাউল ইসলাম এবং ড. জাহিদুল ইসলাম জানান, বিশ্ব মা দিবসে অনেকেই মাকে স্মরণ করেন। কিন্তু আমরা আমাদের মাকে এবং বিশ্বের প্রতিটি মাকেই শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করি। আসলে কোন দিবস মনে হয় বিশেষ ভাবে কিছু মনে করিয়ে দেয়।

মা এর বেলায় প্রতিদিনই সন্তানের কাছে মা দিবস। মায়ের সমান্তরাল কেউ দাঁড়াতে পারে না। এ দুনিয়ায় মায়ের ভালবাসা নির্মল। সন্তানের প্রতি অগাধ ভালবাসা দুনিয়ার প্রতিটি মাকে আবেগপ্রবন করেছে,আনন্দে আপ্লুত হয়েছে মায়েরা সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে সবসময়। বাংলার বীর ফাউন্ডেশনকে এই ধরনের একটা পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই।

আমরা আজ আমাদের মায়ের কথা বলবো। প্রতিটি সন্তানের কাছেই তার মা অনেক মুল্যবান। কিন্তু আমাদের মা আমাদের কাছে ছিলেন অন্যরকম। আমার আব্বা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন তিনি। যে মানুষটির পা থেকে মাথা পয’ন্ত একজন আদর্শ শিক্ষকের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠতো। অত্যন্ত সহজ সরল মানুষ ছিলেন আমার আব্বা। শিক্ষকতা করা ছাড়া অন্য কিছু উনার মাথায় আসতো না। সংসারের অনেক কিছুই আমাদের আব্বা খেয়াল করতে পারেন নাই,বা খেয়াল করেন নাই। কারন মা সার্বক্ষণিক আমাদের আব্বার দায়িত্ব পালন করেছেন সংসারে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে।

আমাদের গ্রামের বাড়ী বালিয়াকান্দি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরে বাকসাডাঙ্গীতে। এখান থেকে আব্বা বালিয়াকান্দিতে যেতেন সাইকেলে স্কুল করতে। খুব খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়।আমি তখন বাকসাডাঙ্গী সরকারী প্রাইমারী বিদ্যালয়ের ছাত্র। আমরা ৪ ভাই ১ বোন। আমি সবার বড়। আমাদের প্রতিটা ভাইবোনকে অনেক দক্ষতার সাথে মানুষ করেছেন আমাদের মা। আমার আব্বা চাচারা তিন ভাই এবং তাদের দুইটা বোন ছিল। আমরা দেখেছি,আমাদের চাচা ও ফুফুদের গাইড করতেন আমাদের মা। চাচা ফুফুরাও আমাদের মাকে খুব শ্রদ্ধা করতেন এবং ভালবাসতেন।

আমাদের যৌথ পরিবার ছিল। আমাদের মেঝো চাচা ব্যবসায়ী ছিলেন। আব্বার কাছ থেকে অনেক টাকা নিয়ে ব্যবসা করে লোকসান দিয়েছেন। তাতে আব্বা একটু হাল্কা প্রতিক্রিয়া দেখালেও আমাদের মা,মেঝো কাকার পক্ষে কথা বলেছেন। নিজের ভাই মনে করে আমাদের চাচাদের আগলে রাখতেন আমাদের মা। গ্রামের ছোট বড় সবাই আমাদের মাকে ভাল বাসতো,শ্রদ্ধা করতো। কেউ বিপদে পরলে মা ঝাঁপিয়ে পরতেন তার জন্য। কাকে চিকিৎসা করাবেন,কাকে চাল ডাল দিবেন,কার মেয়ে টাকার জন্য বিয়ে দিতে পারছেন না,সবকিছুই আমাদের মা সমাধান করতেন। গ্রামের কোন ছেলে মেয়ে স্কুলে গেল না সেটাও খেয়াল রাখতেন আমাদের মা। স্কুলে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন সবাইকে।

আমাদের দাদা দাদীকে খুব ভাল বাসতেন আমাদের মা।দাদা দাদী ও আমাদের মাকে প্রচন্ড রকম ভাল বাসতেন। আমাদের চাচীদের নিজের বোনের মত আগলে রাখতেন মা।চাচীরা খুব শ্রদ্ধা করতেন আমাদের মাকে। কোনদিন আমার মার সাথে চোখ উঠিয়ে কথা বলতে দেখি নাই।

আব্বা তার বেতনের টাকা দিয়ে অনেক জমি কিনেছেন আমাদের গ্রামের মাঠে। যদিও অনেক জমি গড়াই নদীর ভাংগনের ফলে কমে গেছে। ১৯৭৩ সালে আমরা বালিয়াকান্দি থানা প্রপারে চলে আসি। এখানেই পড়ালেখা করেছি। থাকতাম স্কুলের বাসায়। খুব ভাল একটা বাসা ছিল। তখন একমাত্র পাকাপোস্তা ঘর বালিয়াকান্দির।

গ্রামের কোন মানুষ আমাদের বাসায় আসলে আমাদের মা না খাইয়ে কোনদিন তাদের যেতে দেননি। এমনি তেই ৩/৪ জনের খাবার বেশী রাঁধতেন তিনি। গরীব মানুষকে প্রচন্ড ভালবাসতেন,নিজের চিন্তা না করে সবকিছু দিয়ে দিতেন।ফেরেশতার মত মা ছিল আমাদের। আমাদের মেঝো কাকা আর্থিকভাবে কিছুটা দুর্বল ছিলেন। মা আব্বাকে বলতেন,যেভাবেই হোক মজিদকে(আমাদের মেঝো কাকা)আর্থিকভাবে সাবলম্বী করতে হবে।আব্বা তাই করার চেস্টা করেছেন।আজকাল এভাবে পাওয়া মুশকিল।

ড. রেজাউল ইসলাম আরও জানান স্কুলে আমাদের কবিতা মুখস্থ করে বলতে হত। আমার মনে আছে আমার মাকে বই দিতাম আর আমি কবিতা আবৃত্তি করতাম। আমি ঠিকভাবে বলতে পেরেছি কিনা,উনি বলে দিতেন। আমার মা ভাল বাংলা,ইংরেজি, অংক জানতেন। পদ,কারক,সমাস,বাগধারা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা ছিল তাঁর। পাটী গনিতও খুব ভাল পারতেন। কাল(Tense)এর ১২ টা ফর্ম Transformation সহ খুব ভালভাবে আয়ত্ত্ব করেছিলেন তিনি যা আমাদের শিখাতেন। আমার মায়ের কবি জসীম উদ্দিনের “কবর” কবিতাটি মুখস্থ ছিল এবং খুব সুন্দর ভাবে আবৃত্তি করতেন। অত্যন্ত ধম’ভীরু ছিলেন তিনি। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন, কোরআন তেলাওয়াত করতেন।

আমার মায়ের কাছেই কোরআান তেলাওয়াত শিখেছি আমরা।সুরা আর রাহমান মুখস্থ ছিলো। প্রায়ই পাঠ করতেন। গুনগুন করে নির্ভুল ভাবে ও সঠিক সুরে গান গেতেও শুনেছি।তিনি হামদ-নাত পরিবেশন করতেন আর আমাদের শোনাতেন।খুব হাসিখুশি থাকতেন আমার মা। মনে কোন অহংকার ছিল না।সুন্দর রান্না করতে পারতেন। আমাদের অনেক খাইয়েছেন।

আমার মনে আছে আমি তখন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। একদিন হঠাৎ দেখি আমার মা অনেক কিছু রান্না করে হলে এসে হাজির।এসে বললেন, হলে কি খাস না খাস আমি নিজহাতে রেঁধে নিয়ে এসেছি।ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে পড়া অবস্থায় এই কাজটিই করতেন আমার মা।সব সময় আমাদের ভালো রাখার,ভালো খাওয়াবার চেস্টা করতেন।

কৃষি ভার্সিটিতে পড়ালেখা শেষ করে সুগার মিলে চাকুরী নিয়েছি,বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে ঢোকার আগে।সবেমাত্র বিয়েও করেছি। মাত্র ১০/১২ দিন আমার স্ত্রী এলি আমাদের বাসায় এসেছে,নতুন বউ। আমি সুগার মিল থেকে বাসায় এসেছি। আমার মাকে বললাম,খেজুরের কাঁচা রসের পায়েস খাই নাই।