বিএনপির সরকার গঠনের আশা নেই, আ. লীগ সর্বোচ্চ ১৬৬

প্রকাশিত: ১২:০৯ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২৩

রিপোর্টিং : আসন্ন ২০২৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে আওয়ামী লীগ ১৪৮‑১৬৬টি আসন, বিএনপি ১১৯‑১৩৭টি, অন্যান্য দল ১৫টি আসন পেতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত এক সেমিনারে ‘ভোটারের মন ও আসন্ন ২০২৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল’ শীর্ষক একটি গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশকালে এ তথ্য প্রকাশ করেন তিনি।

গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৫টি আসনের ভাগ্য মোটামুটি নির্ধারিত। এগুলো দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত্তি আসন। এই ১৫৫টি ভিত্তি আসনের মধ্যে ৭০টি পেতে পারে আওয়ামী লীগ, ৭০টি বিএনপি এবং বাকি ১৫টি জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি ও বিজেপি পেতে পারে।

তিনি বলেন, তবে বড় দুই দলের মধ্যে যেকোনো দলকে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বাকি ৮১টি আসন পেতে হলে দোদুল্যমান ভোটারদের ভোটের ওপর নির্ভর করতে হবে এবং যেকোনো আসনে জিততে হলে দোদুল্যমান ভোটারদের ৫৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে।

দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট প্রদান সিদ্ধান্তে দ্রব্য মূল্য, মানব নিরাপত্তা, পদ্মা সেতু, ২০১৮ সালের নির্বাচন এবং স্যাংশন‑নিষেধাজ্ঞা‑প্যালেস্টাইনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘোষণা অবজেক্টিভ ফ্যাক্টর ও সংশ্লিষ্ট কাউন্টার‑ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে।

বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সাথে দীর্ঘ খোলামেলা আলাপ‑আলোচনার ভিত্তিতে এই গবেষণা করা হয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেন, দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৫টি বিজয়‑নিশ্চিত এবং ১৪৫টি বিজয়‑অনিশ্চিত আসনের জয়‑পরাজয়ে ভূমিকা রাখবেন দোদুল্যমান ভোটাররা। তবে ভিত্তি আসন অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে বিজয়-নিশ্চিত আসনে দোদুল্যমান ভোটারদের ভূমিকা থাকবে কম। অন্যদিকে বিজয়‑অনিশ্চিত আসনের ভাগ্য নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা থাকবে দোদুল্যমান ভোটারদের।

বিভিন্ন অনুসিদ্ধান্তভিত্তিক হিসাবপত্রে দেখা গেছে, দেশের ১৪৫টি বিজয়-অনিশ্চিত আসনের মধ্যে শেষপর্যন্ত আওয়ামী লীগ ৭৮‑৯৬টি আসন এবং বিএনপি ৪৯‑৬৭টি আসন পেতে পারে। পদ্মা সেতুর কারণে পদ্মা সেতু ভোট লভ্যাংশ হিসেবে দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের ২৩টি বিজয়‑অনিশ্চিত আসনের সবকটিতে আওয়ামী লীগ এবং ঢাকাসহ দেশের পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর অঞ্চলের ১২২টি বিজয়-অনিশ্চিত আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫৫-৭৩টি এবং বিএনপি ৪৯-৬৭টি আসন পেতে পারে।

ড. বারকাত বলেন, এই সম্ভাব্য ফলাফল সঠিক হলে আওয়ামী লীগের জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ ক্ষেত্রে জোট হতে পারে জাতীয় পার্টির সঙ্গে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষে এককভাবেও সরকার গঠন সম্ভব হতে পারে, যদি তারা সর্বোচ্চ সংখ্যক সম্ভাব্য আসন পায়।’

তিনি বলেন, ‘সম্ভাব্য চূড়ান্ত ফলাফল বহাল থাকলে বিএনপির পক্ষে এককভাবে সরকার গঠনের সম্ভাবনা নেই। তবে বিএনপির পক্ষে জোটবদ্ধ সরকার গঠনের সম্ভাবনা যতটুকু আছে, তা যথেষ্ট শর্তসাপেক্ষ। এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে অবশ্যই সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিশ্চিত করতে হবে এবং জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বাকি সব দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে হবে। একইসঙ্গে এই সমীকরণের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের আসন সংখ্যা কোনো অবস্থাতেই সম্ভাব্য সর্বনিম্ন সংখ্যক আসনের বেশি হতে পারবে না। এত বেশি শর্তসাপেক্ষ বিধায় বিএনপির পক্ষে জোটবদ্ধ সরকার গঠনের বাস্তব সম্ভাবনা ক্ষীণ।’

অর্থনীতি সমিতির এই সভাপতি বলেন, প্রক্ষেপিত হিসাব কত দূর সঠিক-বেঠিক তা বুঝতে তিনটি বড় মাপের চলক-ভিত্তি ভোট, ভিত্তি আসন এবং দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট প্রদান সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য কাঠামো-এর সম্ভাব্য মান যৌক্তিকভাবে পরিবর্তন করে দেখা গেছে যে, তাতে করে দলভিত্তিক আসন বণ্টনে এমন কোনো হেরফের হয় না, যাতে চূড়ান্ত উপসংহার পরিবর্তিত হতে পারে। সুতরাং, আসন্ন ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য আসনসংখ্যার যে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, তা যথেষ্টমাত্রায় সঠিক ও দৃঢ়-সবল এবং সম্ভাব্য নির্বাচনী ফলাফল সংশ্লিষ্ট গৃহীত পদ্ধতিতত্ত্ব যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত।