জনশক্তি রপ্তানিতে বাংলাদেশের সঙ্গে লিবিয়ার সমঝোতা স্মারক সই

প্রকাশিত: ১২:২০ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২৩

রিপোর্টিং : গত বুধবার (২৫ অক্টোবর) লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলীতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং লিবিয়ার শ্রম ও পুনর্বাসন মন্ত্রী প্রকৌশলী আলী আবেদ রেজা এই স্মারক স্বাক্ষর করেন। এ সময় বাংলাদেশ থেকে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ও লিবিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার এবং লিবিয়ার শ্রম মন্ত্রণালয়ের ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, সমঝোতা স্মারকটি স্বাক্ষরের মাধ্যমে লিবিয়ায় বৈধভাবে বাংলাদেশিদের নতুন নতুন কর্মসংস্থান সুযোগ বাড়বে। এটি লিবিয়ায় নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশিদের অধিকার সুরক্ষা এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এ ছাড়াও সমঝোতা স্মারকটি লিবিয়ায় অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এটি বাংলাদেশ ও লিবিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নত করবে এবং দুদেশের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করবে বলে বাংলাদেশ দূতাবাস আশা করছে।

এই সমঝোতার আওতায় লিবিয়ায় নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে বেতন-ভাতা, কর্মকাল, আবাসন, খাদ্য, ছুটি ও চাকরি সংক্রান্ত সুবিধা ইত্যাদি উল্লেখ করে নিয়োগকর্তার সঙ্গে একটি প্রাথমিক চুক্তি বাংলাদেশে স্বাক্ষরিত হবে।

এর মাধ্যমে লিবিয়ায় যাওয়া কর্মীরা দেশে থাকতেই তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে। এ ছাড়াও নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সর্বোত্তম তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সহজীকরণ করা হবে এবং নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীদের লিবিয়া আসা ও মেয়াদ শেষে দেশে ফেরার খরচ নিয়োগকর্তা বা কোম্পানী বহন করবে।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের আগে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী লিবিয়ার শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বৈঠকে লিবিয়ার শ্রমমন্ত্রী বলেন, এতোদিন বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় কর্মী নিয়োগের কোনো সমঝোতা স্মারক কার্যকর না থাকায় বিভিন্ন মহল সুযোগ গ্রহণ করে আসছিল।

স্মারকের ফলে বাংলাদেশি কর্মীরা বিভিন্ন প্রতারণার শিকার এবং জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছিল। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের ফলে একটি আইনি কাঠামো তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে লিবিয়ায় নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা সামাজিক নিরাপত্তা ও চিকিৎসা বীমার আওতায় আসবে বলে মন্ত্রী জানান। এ ছাড়াও তিনি জানান, লিবিয়ায় অবৈধভাবে বসবাসরত বিদেশি কর্মীদের নিয়মিতকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশিদেরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী লিবিয়ার শ্রম মন্ত্রীর উত্থাপন করা বিভিন্ন বিষয়ে প্রস্তাবনাকে স্বাগত জানান। তিনি লিবিয়ায় আগত কর্মীদের ভিসা সংগ্রহ থেকে শুরু করে যাবতীয় ব্যয় নিয়োগকর্তা বা কম্পানেকে বহন করার মাধ্যমে অভিবাসন খরচ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার জন্য লিবিয়ার শ্রমমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। একইসঙ্গে তিনি কর্মীদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং চিকিৎসা বীমার ব্যয় নিয়োগকর্তার পরিশোধের ব্যবস্থা করারও অনুরোধ করেন।

মন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত পূর্ব অভিজ্ঞতার সনদ লিবিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি প্রদানের অনুরোধ জানান। এ ছাড়াও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী লিবিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের বৈধতা অর্জনের প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের জটিলতা নিরসনে ওই দেশটির শ্রম মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে লিবিয়ায় ‘আনডকুমেন্টেট’ (বৈধ কাগজ ছাড়া) বাংলাদেশিসহ অন্যান্য বিদেশি কর্মীদের বৈধকরণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এ ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে লিবিয়ার মন্ত্রী আশ্বস্ত করেন। একই সঙ্গে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণের জটিলতা নিরসনে এই কমিটি কাজ করবে বলেও তিনি জানান।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল লিবিয়া সফর করছে। সফরকালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ত্রিপলীতে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এসময় তিনি লিবিয়ায় কর্মরত প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যাবলী সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।

প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে লিবিয়ার স্বাক্ষরিত সর্বশেষ সমঝোতার মেয়াদ এর আগে শেষ হয়ে যায়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দূতাবাসের পক্ষ থেকে দীর্ঘ ধারাবাহিক ও অক্লান্ত প্রচেষ্টার পর সমঝোতা স্মারকটি চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়েছে।